ঢাবি ছাত্রাবাসে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ: একটি নতুন দিগন্ত
বছরের পর বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোর আসন ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এবার শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আগে হলগুলোতে আসন বরাদ্দের পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের গণরুমে থাকতে বাধ্য করা হতো এবং নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলে সহ্য করতে হতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এখন, সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের আসন পাওয়ার আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করছেন।
হল কর্তৃপক্ষ কক্ষ পুনরুদ্ধার করে স্নাতকোত্তর শেষ করা রাজনৈতিক কর্মী ও বহিরাগতদের হল ত্যাগ করতে বলেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলে ২০২৩-১৪ সেশনের আইনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই ধাপে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ড. আয়নুল ইসলাম জানান, “সবার জন্য আসন বণ্টনের পরও আমাদের ডর্মে এখনও আসন খালি আছে।” তিনি আরও বলেন, “প্রথমবারের মতো প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
আওয়ামী শাসনের ১৫ বছরে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে হলগুলো ছিল, যেখানে স্নাতকোত্তর শেষ করেও নেতা-কর্মীরা কক্ষ দখল করে থাকতেন। বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী রিয়াজ উল্লাহ বলেন, “কৃত্রিম আসন সংকট কেটে যাওয়ায় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।”
আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাজিম বলেন, “এক বছর নির্যাতনের পর অবশেষে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত আসন পেয়েছি।” তবে, নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও মাত্র ৫টি মহিলা হলে আসন সংকট অব্যাহত রয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুরমি চাকমা বলেন, “আমি গত আগস্টে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু এখনও কোন কল পাইনি।” শামসুন নাহার হলে আসনের জন্য তিনি পুনরায় আবেদন জমা দিয়েছেন।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “প্রথমবারের মতো আমরা হল ব্যবস্থাপনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছি। মহিলা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে – এটি ইতিবাচক লক্ষণ হলেও আসন সংকট মোকাবিলা বড় চ্যালেঞ্জ।”
তিনি জানান, নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইউজিসি ও সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। আপাতত বিদ্যমান হলে আসন সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।